সোরিয়াসিস চর্মের একটি জটিল ও কঠিন সমস্যা। এটি অনেকটা একজিমা সাদৃশ। চর্মের ওপর শুষ্ক ক্ষত হয়, এর ওপর আঁশের মতো হয়; শুকিয়ে ভুসির মতো খসে পড়ে। কড়াই চটকার মতো ছাল ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে সোরিয়াসিসে চুলকানি থাকে, চুলকালে মধুর মতো ঘন রস বের হয়। লাল বর্ণের চ্যাপ্টা উদ্ভেদ বের হয়ে তা থেকে খোলস উঠতে থাকে, যা খুব পাতলা আঁশের মতো বা খুশকির মতো; একেই সোরিয়াসিস বলে।
সোরিয়াসিসের কারণ : ১. সঠিক কারণ এখনো অজানা, ২. জীবাণু সংক্রমণ, ৩. লিভার ক্রিয়ার গোলযোগ থাকলে, ৪. হোমিওপ্যাথিক দৃষ্টিকোণ থেকে সোরা ধাতু দোষই হলো মূল কারণ, ৫. শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার অভাব, ৬. খাবার-দাবার, ৭. পুষ্টির অভাব, ৮. শীত প্রধান অঞ্চল, ৯. কালো লোকদের তুলনায় সাদা বা ফর্সা লোকদের বেশি হয়।
লক্ষণ :
১. ছোট-বড় নানা আকারে লাল বর্ণের একটি বা অনেক ম্যাকুল বা প্যাঁচ দেহের নানা স্থানে প্রকাশ পায়; ২. ঈষৎ ধূসর বর্ণের চকচকে প্রচুর আঁশ ওঠে; ৩. কোনো প্রকার ফুসকুড়ি হয় না, রস পড়ে না; ৪. প্যাঁচ মিলিয়ে গিয়ে আবারো আসে, কোনো প্যাঁচ দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়। অতিরিক্তি চুলকালে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে মধুর মতো আঠালো রস বের হয়; ৫. ক্ষত মিলিয়ে যাওয়ার পর কোনো দাগ থাকে না; ৬. আঁশ উঠিয়ে দিলে তার নিচটা মসৃণ ও শুষ্ক দেখায়; ৭. শরীরের প্রায় সবখানেই হয়ে থাকে, অত্যাধিক বেশি হলে পুরো শরীরে হয়ে থাকে; ৮. নখ আক্রান্ত হলে নখের চার পাশে ও নখের নিচে ঘন আঁশ জমে নখ মোটা, ভেঙে যায় ও বিকৃত হয়ে যায়, বিবর্ণ দেখায়, নখ ফাঙ্গাস ইনফেকশনের মতো দেখায়; ৯. যাদের সোরিয়াসিসের সাথে রিউমেটিক আর্থ্রাইটিস থাকে তাদের ভয়ানক কষ্ট ভোগ করতে হয়। গায়ে সামান্য সূর্যতাপ লাগলে বা কোনা উত্তেজক বস্তুর সংস্পর্শে গেলে রোগী অস্বস্তিবোধ করে; ১০. কদাচিৎ রোগীর সর্বাঙ্গের ত্বক আক্রান্ত হয়ে লাল হয়ে প্রদাহ জন্মায় এবং এর ওপর পাতলা আঁশ স্তরে জমা হয়।
সোরিয়াসিস রোগ নির্ণয় : * প্রথম দর্শনে এ রোগ নির্ণয় করা কঠিন। কারণ অন্যান্য চর্মরোগের সাথে ভুল হওয়া খুব স্বাভাবিক। * মাথার সোরিয়াসিসের সাথে মাথার খুশকির পার্থক্য করতে হবে। * অন্যান্য চর্মরোগের আঁশের সাথে এর পার্থক্য করতে হলে এর আঁশ খুবই পাতলা, চকচকে, রুপালি রঙের মতো হয়। * এতে মাথার চুল নষ্ট হয় না, জট হয় না। * সোরিয়াসিসের সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকতে পারে, সিফিলিস, একজিমা, নখের ফাঙ্গাস ইনফেকশন এবং ক্যান্সারের সাথে পার্থক্য করে জেনে নিতে হবে। সোরিয়াসিস থেকেও স্কিন ক্যান্সার হতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ : রোগীকে সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে * পরিষ্কার নরম জামা পরতে হবে। রোদ, গরম ও উত্তেজক স্থানে যাওয়া যাবে না * নিমপাতার গরম পানিতে গোসল করতে হবে * পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে * টাটকা সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। ফাস্টফুড ও অ্যালার্জি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে।